বাইকবাহিনী নিয়ে প্রচার বন্ধ করলো কমিশন
নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ৮ই জুলাই— পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে একটির বেশি মোটর বাইক ব্যবহার করা যাবে না। রবিবারই এই মর্মে ১৭টি জেলাতেই নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। প্রসঙ্গত, ৩রা জুলাই রাজ্য বামফ্রন্ট কমিশনে স্মারকলিপি দিয়ে জানায় গোটা রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বাইকবাহিনীর দাপটে গ্রামের মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত। বিরোধী দলের প্রার্থীরা প্রচারে বেরোতে পারছেন না। গ্রামে গ্রামে শাসক দলের ইন্ধনে বাইকবাহিনী ঢুকে মানুষকে হুমকি দিচ্ছে। বাইকবাহিনীর এই দাপটের ফলে গ্রামে গ্রামে নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অবিলম্বে শাসক দলের প্রার্থীদের সপক্ষে প্রচারে বাইকবাহিনীর দাপট বন্ধ করার দাবি জানায় রাজ্য বামফ্রন্ট। পরে ৬ই জুলাই কমিশনে সর্বদলীয় বৈঠকে বামদলগুলির সঙ্গে এই বিষয়ে একই সুরে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস, বি জে পি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি। শাসক দল তৃণমূল অবশ্য সর্বদলীয় বৈঠক বয়কট করেছিলো। বিরোধী দলগুলির হাজার আপত্তি সত্ত্বেও গ্রামেগঞ্জে বাইকবাহিনীর দাপট চলতেই থাকে। রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্র রোড শো করেন। সেখানে প্রায় ৮০০টি বাইক ১৫০০ জন সওয়ার ছিলেন। এরপরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন নড়েচড়ে বসে। সোমবার কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, প্রচারের সময় একটির বেশি বাইক ব্যবহার করা যাবে না। যদি বিশেষ কারণে একটির বেশি বাইক ব্যবহার করতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলকে পুলিস এবং জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। না হলে পুলিস আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। এদিন কমিশনের দপ্তরে চতুর্থ এবং পঞ্চম দফায় যে ৮ জেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে সেখানকার জেলাশাসক ও পুলিস সুপারদের বৈঠক ছিলো। ওই বৈঠকেও প্রচারে বাইক ব্যবহারের প্রসঙ্গটি জানিয়ে দেন নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে।
এদিকে প্রথম দফায় তিন জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ভোটের প্রচার মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় শেষ হচ্ছে। ১১ই জুলাই তিন জেলায় ভোট গ্রহণ। প্রথম দফায় প্রায় ৭৪ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬২১জন ভোটদাতা রয়েছেন। এরমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে রয়েছেন ৩৪ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪১০ জন ভোটার। বাঁকুড়া জেলায় ভোটার সংখ্যা ২২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪০৪ জন। পুরুলিয়াতে ভোটদাতা রয়েছেন ১৭ লক্ষ ২৩ হাজার ৮০৭ জন। প্রথম দফায় ভোটের দিন তিন জেলায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকার কথা ৪৮ হাজার ৬২৮ জন নিরাপত্তা রক্ষীর। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্যের পক্ষ থেকে প্রথম দফার তিন জেলায় কতজন সশস্ত্র পুলিস পাঠানো হয়েছে, সেই তথ্য নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রথম দফায় ১৫০ কোম্পানি পাঠানোর কথা আর রাজ্য সরকারের দেওয়ার কথা ৩৫০ কোম্পানি। কমিশনের সচিব জানান, প্রচার পর্ব বন্ধ হয়ে যাবার পর থেকে এলাকার ভোটার নন এমন কেউ-ই আর সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঢুকতে পারবেন না। প্রসঙ্গটি ওঠে, এলাকার ভোটার নন এমন সাংসদ, বিধায়ক, রাজনৈতিক নেতা বা অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে ভোটের দিন কী বাধানিষেধ রয়েছে তা নিয়ে। সচিব বলেন, ১১ তারিখে যে সমস্ত এলাকায় ভোটগ্রহণ সেখানে ৯ই বিকেল ৫টায় প্রচার শেষ হচ্ছে। অর্থাৎ ৯ই বিকেল ৫টার পর থেকে এলাকার ভোটার না হলে বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী যেই হোন ঢুকতে পারবেন না।
ভরা বর্ষা এবং রমজান মাসের দিকে তাকিয়ে রাজ্য বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে এনে সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত করার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো রাজ্য সরকারের সে বিষয়ে কোনো মতামত না আসায় ভোট গ্রহণের সময়ের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্তই ভোটগ্রহণ করা হবে। কমিশনের সচিব বলেন, বিজ্ঞপ্তি জারির সময়ই ভোটগ্রহণের সময়ও রাজ্য সরকার ঠিক করে দেয়। নতুন করে আর সময় পরিবর্তনের ব্যাপারে রাজ্য সরকার কিছু জানায়নি। তবে রমজান মাসে যে সমস্ত ভোটকর্মী রোজা রাখেন তাঁদের জন্য ইফ্তার এবং সেহেরির সময় কিছু খাবারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে সমস্ত জেলার জেলাশাসককে। ভোটার যাঁরা রোজা রাখেন তাঁরা যাতে সকাল সকাল এসে দ্রুত ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন তারজন্য সমস্ত প্রিজাইডিং অফিসারকে মৌখিকভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি নদীতে জলস্তর বাড়ছে। এদিন কমিশনের দপ্তরে বৈঠকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির প্রশাসনিক কর্তারা এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক কয়েকটি বিশেষ বিশেষ জায়গায় হাতিকে কাজে লাগাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ভোট গ্রহণ পর্ব কী ভাবে সুষ্ঠুভাবে শেষ করা যায় তার উপরই এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন। আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে বিশেষ নজর থাকছে মুর্শিদাবাদ জেলার উপর।
No comments:
Post a Comment